RelationDigest

Saturday, 13 April 2024

পয়লা বৈশাখ

Read on blog or Reader
Site logo image বাংলা গল্প ভাণ্ডারে আপনাদের স্বাগত Read on blog or Reader

পয়লা বৈশাখ

debasishchakladar

April 14

"এসো, এসো হে বৈশাখ / তাপনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক"।

বঙ্গ জীবনে নানান উৎসব আসে ঋতুকে ঘিরে।পুরনোকে ফেলে বছর ঘুরে আবারও চলে এলো পয়লা বৈশাখ । তেরো পার্বণের মধ্যে পয়লা বৈশাখ কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গাজন চড়কের শেষে আসে এই দিনটি। বাংলা আর্থিক বছরটাও শুরু হয় এইদিনে। ব্যবসায়ীরা গাঢ় লাল রঙের নতুন জাবদা খাতায় মঙ্গলচিহ্ন এঁকে লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করেন। সারা বছর নগদ যাঁরা কেনেন না, তারা সাধারণত খাতায় লিখে জিনিসপত্র নিয়ে থাকেন। আর সে খাতায় ধার বাকি খরচের হিসেব বৈশাখের প্রথম দিন মিটিয়ে দেওয়া হয়। শোনা যায়, মুর্শিদকুলি খাঁ পয়লা বৈশাখের সময় রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা চালু করেন। তখন এর নাম ছিল 'পুণ্যাহ উৎসব'। চৈত্রের শেষে ধান উঠত খামারে। আর সেই সময়েই রাজস্ব আদায়ের দিনটি বেছে নেওয়া হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনাদায়কৃত রাজস্ব মুকুব করাও হত। ইংরেজদের দেওয়ানি লাভের পরও মুর্শিদাবাদে এই উৎসব পালিত হত।

বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতিতে কিভাবে এলো তা জানতে হলে আমাদের অবশ্যই বাংলা নববর্ষের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। পহেলা বৈশাখ বা পয়লা বৈশাখ পালন করা হয় বাংলা বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে। এই বাংলা বছর বা বাংলা পঞ্জিকা কিভাবে এলো? প্রথমে সৌর পঞ্জি অনুসারে বাংলা মাস পালিত হতো অনেক প্রাচীনকাল থেকেই। তখনও আসাম, তামিল নাড়ু, ত্রিপুরা, বঙ্গ, পাঞ্জাব প্রভৃতি সংস্কৃতিতে বছরের প্রথম দিন উদযাপনের রীতি ছিলো। তাহলে বাংলা নববর্ষের ইতিহাসে বাংলা বারো মাস কিভাবে এলো? আর এর দিন, ক্ষণ কিভাবে ঠিক করা হলো? বাংলা সনের প্রবর্তক নিয়ে সম্রাট আকবর বেশি আলোচিত হলেও, বাংলা পঞ্জির উদ্ভাবক ধরা হয় আসলে ৭ম শতকের রাজা শশাঙ্ককে। পরবর্তীতে সম্রাট আকবর সেটিকে পরিবর্তিত করেন খাজনা ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে। প্রথমে আকবরের পঞ্জিকার নাম ছিল "তারিখ-এ-এলাহী" আর ঐ পঞ্জিকায় মাসগুলো আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর এমন নামে। তবে ঠিক কখন যে এই নাম পরিবর্তন হয়ে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ হলো তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। ধারণা করা হয় যে, বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে। যেমন- বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জৈষ্ঠ্য, শার থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ এমন করেই বাংলায় নক্ষত্রের নামে মাসের নামকরণ হয়।

সম্রাট আকবর রাজস্ব আদায়ের জন্য কেনই বা নতুন পঞ্জিকা নির্ধারণ করলেন ? ভারতবর্ষে মোগল সম্রাজ্য পরিচালিত হতো, হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে। আর হিজরি পঞ্জিকা চাঁদের উপর নির্ভরশীল। যেহেতু কৃষকদের কৃষি কাজ চাঁদের হিসাবের সাথে মিলতো না, তাই তাদের অসময়ে খাজনা দেয়ার সমস্যায় পরতে হতো। সেই কারণে খাজনা আদায়ে কৃষকদের যেন কোন অসুবিধা না হয়, সম্রাট আকবর বর্ষ পঞ্জিতে সংস্কার আনেন। তখনকার বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সম্রাট আকবরের আদেশে সৌর সন ও হিজরি সন এর উপর ভিত্তি করে বাংলা সনের নিয়ম তৈরি করেন। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে প্রথম বাংলা সন গণনা করা হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবেই খাজনা আদায়ে এই গণনা কার্যকর শুরু হয়েছিল ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। পূর্বে ফসল কাঁটা ও খাজনা আদায়ের জন্য এই বছরের নাম দেয়া হয়ে ছিলো ফসলি সন। পরে তা বঙ্গাব্দ আর বাংলা সন করা হয়। তখন চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে খাজনা, শুল্ক দিতে হতো কৃষকদের। তাই তখন থেকেই সম্রাট আকবর কৃষকদের জন্য মিষ্টি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। হালখাতার প্রচলনও সম্রাট আকবরের সময় থেকেই ব্যবসায়ীরা করেছে।

পুরোনো কলকাতায় বাবুরা নববর্ষের বিশেষ দিনে কোঁচানো ধুতি চাদরে উৎসবের মেজাজে মেতে উঠতেন। আমন্ত্রিত থাকতেন বহু অতিথি। বাবুদের বৈঠকখানা সেজে উঠত। সাহেবদের নিমন্ত্রণ করে এনে সঙ নৃত্যের ব্যবস্থা করা হত। সঙ্গে প্রচুর খানা পিনার ব্যবস্থা থাকত।

শোনা যায় একবার প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর তার নতুন বাগানবাড়িতে সাহেব ও মেমসাহেবদের নিমন্ত্রণ করে আনলেন। অনেক রকম সুস্বাদু খাবার সাহেবগণকে খাওয়ালেন। পাশ্চাত্য সঙ্গীত এবং নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে নববর্ষের সন্ধ্যা মহাসমারোহে কাটিয়েছিলেন ।

" যুবত্বকালের একবছর গেল দেখে যুবক-যুবতীরা বিষণ্ণ হলেন…. আগামীর মুখ চেয়ে, আশার যন্ত্রণায় আমরা সেসব মন থেকে তারই সঙ্গে বিসর্জন দিলাম। ভূতকাল যেন আমাদের ভ্যাংচাতে ভ্যাংচাতে চলে গেলেন। বর্তমান বৎসর স্কুল মাস্টারের মত গম্ভীরভাবে এসে পড়লেন। ভয়ে হর্ষে তটস্থ ও বিস্মিত"। হুতোমের নকশা নামক বইতে কলকাতার নববর্ষ এভাবেই ধরা পড়েছিল। বাঙালিদের দোকানে হাতে তৈরি খাস্তা, নোনতা আর মিষ্টির দরাজ আয়োজন থাকতো আপ্যায়িতদের জন্য। অতিথিদের খাওয়ানোকে বলা হতো 'উঠনো'। দোকানে হালখাতার ধুম থাকতো চোখে পড়ার মতো।

মুসলমান ব্যবসায়ীরাও পয়লা বৈশাখের দিনটি হিন্দুদের সাথে মেতে ওঠেন উৎসবে। তাদের দোকানগুলি সুন্দর করে সাজিয়ে তোলেন। আগেকার দিনে দোকানে ঢোকার সময়ে তারা প্রথমে সুগন্ধি গোলাপ জল ছিটিয়ে দিতেন মাথায় গায়ে। সেকালে দোকানে খদ্দের এলে কেওড়া ভেজানো ঠান্ডা সরবত খাওয়ানো হতো। সাথে মিষ্টিমুখ ও ভূরিভোজের ব্যবস্থা।

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আগে আয়োজন হতো বৈশাখী মেলার। মেলাতে নানা রকম হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি হতো। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগে শহরের চেহারাটা পাল্টেছে। পুরানো দিনের নিয়মগুলো আজ বেমানান তবু বোধহয় ঋতুর স্পর্শে আজো মন স্মরণ করায় বাঙালির নিজস্বতাকে।

বাংলাদেশে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল শুভ নববর্ষ পালন করা হয়। ১৯৮৯ সাল থেকেই মঙ্গল-শোভাযাত্রা বাঙ্গালির নববর্ষ উদযাপনের একটি প্রধান আকর্ষন। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর চারুকলা অনুষদ থেকে আয়োজিত যে মঙ্গল-শোভাযাত্রার বের করে, সেটিকে "মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য" হিসেবে ঘোষাণা করে। সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও পরবর্তিতে বিভিন্ন বাঙ্গালি রীতি-নীতি বর্তমান বাংলাদেশের বর্ষ বরণে স্থান পেয়েছে।
প্রথমত, গ্রামীন রীতি-নীতি
অনুসারে ভোর সকালে কৃষকেরা নতুন জামা গায়ে দিয়ে পরিবারের সাথে নানান পদের ভর্তা দিয়ে পান্তা ভাত, পিঠা-পুলি, মিষ্টি খেয়ে দিনটি সূচনা করে। তাছাড়া, কয়েকটি গ্রাম মিলে বৈশাখী মেলার আয়োজন করতো। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও তাদের পণ্য মেলায় উঠাতেন। কেউ মাছ, কেউ খেলনা, কেউবা শাড়ি-চুড়ি, চুলের ফিতা। ধারণা করা হয় ইলিশ মাছ খাবার ঐতিহ্য এই মেলা থেকেই এসেছে।

দ্বিতীয়ত,রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ ও মঙ্গল-শোভাযাত্রা সহ গানের অনুষ্ঠান করা হয় । সূর্য উঠার সাথে সাথে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় রমনার বটমূল গানে গানে মুখরিত হয়ে উঠে। সকলে মিলে একই সুরে গেয়ে ওঠে-"এসো, হে বৈশাখ এসো এসো"। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে গ্রামীন সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন মুখোশ ও মুর্তি বানিয়ে ঢাকার রাস্তায় শোভাযাত্রা করে বরণ করা হয় নতুন বছরকে। এই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারে সকলেই।

তৃতীয়ত, সোনারগাঁও এ ঈসা খাঁ এর আমলে বউমেলা হতো। সেখানে স্থানীয় বটতলায় কুমারী, নববধূ ও মায়েরা তাদের মনের ইচ্ছা পূরণে পূজা করতেন । পাঁঠা বলি দেওয়া হত। তবে এখন শান্তির বার্তার আশায় তারা দেবীর কাছে কবুতর বা পায়রা উড়িয়ে দেয়। এছাড়াও সোনারগাঁও এ ঘোড়ামেলারও প্রচলন ছিলো। লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, আগে যামিনী সাধন নামের এক ব্যক্তি নববর্ষের দিন ঘোড়া চড়ে সবাইকে প্রসাদ দিতেন । তার মৃত্যুর পরে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয় এবং পরবর্তীতে এটিকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন হয়। আগে মাটির ঘোড়া রাখা হতো, এরপর থেকে মেলায় নাগর-দোলা, চরকা, ঘোড়ার আকারে ঘূর্ণী দোলনা রাখা হয়।

বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় নিয়ে মতান্তর লক্ষ্য করা যায়। কেউ বলে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বাংলা বছরের শুরু হয়, তাই শুভেচ্ছা তখনই দিতে হবে। আর অপর পক্ষ বলে ইংরেজি পঞ্জিকার ন্যায় রাত ১২টার পরেই পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে হয়। আসলে কোনটি সঠিক? ভোরের আলো ফুটার আগে কি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো যাবে না? যেহেতু আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা গ্রেগরীয় পঞ্জিকা অনুসরণ করে, তাই সে নিয়ম অনুযায়ী রাত ১২টার পরেই বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে পারি।

তথ্যসূত্র-
১. হুতোম প্যাঁচার নকশা, কালীপ্রসন্ন সিংহ
২. Calcutta Past & Present, Kathleen

  1. উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য সূত্র থেকে সংগৃহিত তথ্য
Comment
Like
You can also reply to this email to leave a comment.

বাংলা গল্প ভাণ্ডারে আপনাদের স্বাগত © 2024. Manage your email settings or unsubscribe.

WordPress.com and Jetpack Logos

Get the Jetpack app

Subscribe, bookmark, and get real-time notifications - all from one app!

Download Jetpack on Google Play Download Jetpack from the App Store
WordPress.com Logo and Wordmark title=

Automattic, Inc. - 60 29th St. #343, San Francisco, CA 94110  

at April 13, 2024
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

No comments:

Post a Comment

Newer Post Older Post Home
Subscribe to: Post Comments (Atom)

Three Things #4

1. ͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏     ­͏   ...

  • [New post] Wiggle Kingdom: April Earnings on Spring Savings!
    Betsi...
  • [New post] Balancing the ‘E’ and ‘S’ in Environment, Social and Governance (ESG) crucial to sustaining liquidity and resilience in the African loan market (By Miranda Abraham)
    APO p...
  • Something plus something else
    Read on bl...

Search This Blog

  • Home

About Me

RelationDigest
View my complete profile

Report Abuse

Blog Archive

  • August 2025 (39)
  • July 2025 (59)
  • June 2025 (53)
  • May 2025 (47)
  • April 2025 (42)
  • March 2025 (30)
  • February 2025 (27)
  • January 2025 (30)
  • December 2024 (37)
  • November 2024 (31)
  • October 2024 (28)
  • September 2024 (28)
  • August 2024 (2729)
  • July 2024 (3249)
  • June 2024 (3152)
  • May 2024 (3259)
  • April 2024 (3151)
  • March 2024 (3258)
  • February 2024 (3046)
  • January 2024 (3258)
  • December 2023 (3270)
  • November 2023 (3183)
  • October 2023 (3243)
  • September 2023 (3151)
  • August 2023 (3241)
  • July 2023 (3237)
  • June 2023 (3135)
  • May 2023 (3212)
  • April 2023 (3093)
  • March 2023 (3187)
  • February 2023 (2865)
  • January 2023 (3209)
  • December 2022 (3229)
  • November 2022 (3079)
  • October 2022 (3086)
  • September 2022 (2791)
  • August 2022 (2964)
  • July 2022 (3157)
  • June 2022 (2925)
  • May 2022 (2893)
  • April 2022 (3049)
  • March 2022 (2919)
  • February 2022 (2104)
  • January 2022 (2284)
  • December 2021 (2481)
  • November 2021 (3146)
  • October 2021 (1048)
Powered by Blogger.