RelationDigest

Friday, 5 May 2023

[New post] অভিশপ্ত হসপিটাল

Site logo image debasishchakladar posted: " কোন এক অজানা কারণে আজ থেকে প্রায় বছর কুড়ি আগে উত্তর দিনাজপুর জেলার   প্রত্যন্ত গ্রাম ইসলামপুরের একমাত্র হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যায়। এত বছর বাদে গ্রামের মানুষের চাপে ও গ্রামের দরিদ্র মানুষদের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে অঞ্চল প্রধান সিদ্ধান্ত নেয় এই পরি" বাংলা গল্প ভাণ্ডারে আপনাদের স্বাগত

অভিশপ্ত হসপিটাল

debasishchakladar

May 5

কোন এক অজানা কারণে আজ থেকে প্রায় বছর কুড়ি আগে উত্তর দিনাজপুর জেলার   প্রত্যন্ত গ্রাম ইসলামপুরের একমাত্র হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যায়। এত বছর বাদে গ্রামের মানুষের চাপে ও গ্রামের দরিদ্র মানুষদের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে অঞ্চল প্রধান সিদ্ধান্ত নেয় এই পরিত্যক্ত হসপিটালকে পুনরায় চালু করার জন্য। আর এই গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয় কলকাতার নবীন উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ডাঃ অর্ণব দত্তকে।

সেইজন্যেই অর্ণবের আজ বিকেলে হসপিটাল আসা।  হসপিটাল না বলে পোড়োবাড়ী বলাই ভাল। একতলায় একটা ঘর পরিষ্কার করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সন্ধ্যা হতেই বাড়িটার চুন, সুড়কি খসে পড়ে দেয়ালের লাল ইটগুলো বেরিয়ে পড়ে বাড়িটার কঙ্কালসার চেহারা ফুটে উঠেছে। বিরাট বিরাট বট গাছের ঝুড়ি বাড়িটার গা বেয়ে উপরে উঠে গেছে। চাদেঁর আবছা আলোয়, হাসপাতালের অবয়বটাকে মনে হচ্ছে যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন কোন দৈত্য যে কোন সময় জেগে উঠবে।

 " চলে যাও এখান থেকে। জায়গাটা ভালো না।এখানে থাকলে কপালে দুঃখ আছে …" কথাগুলো বলে কোথা থেকে সাদা চাদর গায়ে দেওয়া একটা লোক যেমন হঠাৎ করে এসেছিল সেই রকম হঠাৎ করেই অন্ধকারে উধাও হয়ে গেল। অর্ণব কিছু বলার সুযোগ পেল না।লোকটা কর্পূরের মত উবে গেল।

বই পড়তে পড়তে  কখন যে রাত ১১ টা বেজে গেছে খেয়াল ছিলনা অর্ণবের। সবে মাত্র ঘুম এসেছে চোখে, এমন সময় উপরতলা থেকে চিৎকার চেচাঁমিচির আসতে লাগল। লাইট নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে  গিয়ে দেখে সবগুলো ঘরই খোলা। ভিতরে মোমবাতি আর হ্যারিকেন জ্বলছে, দুজন নার্স একজন রোগীকে ধরে রেখেছে। রোগীটা চেচাঁচ্ছে আর বলছে,আমাকে বাচাঁও। ভয়ে হাত পা কাপঁতে লাগলো অর্ণবের।

"ওকে ধরে রেখেছেন কেন আপনারা?"অতি কষ্টে ডাঃ অর্ণব বলেন

অর্ণবের দিকে তাকালো নার্স আর রোগী। ওদের  কঙ্কালের মুখ দেখে  রক্ত হিম  হয়ে গেল তার। কোন রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই সবকিছু আগের মত হয়ে গেল, কেউ নেই। ঘরগুলোও আগের মত তালাবদ্ধ। ভয়ে হাত পা কাপঁছে । হঠাৎ নিচ থেকে বিকট এক চিৎকার শোনা গেল। দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখে      মাটিতে উপুর হয়ে পড়ে আছে সন্ধ্যাবেলা চাদর গায়ে দিয়ে আসা সেই লোকটা। মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।

নিজের ঘরে গিয়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে ফিরে এসে দেখে লোকটা নেই, এমনকি ঘরে   কোন রক্ত বা রক্তের দাগও নেই। ভয়ে হাত পা যেন অবশ হয়ে আসে। আবার চিৎকার চেচাঁমিচি ভেসে আসতে লাগলো দুতলা থেকে। উপরের দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখে  আবারও আলো জ্বলছে দুতলার ঘরে আর ভেসে আসছে সেই রোগীর আর্তনাদ, আমাকে বাচাঁও। আর সহ্য করতে না পেরে, এক দৌড়ে বেরিয়ে রাস্তার উপর দাড়িয়ে হাফাঁতে লাগল অর্ণব।  রাত তখন প্রায় তিনটা।

 এত রাত্রে হঠাৎ দেখে একটা লোক তার দিকেই হেঁটে আসছে।লোকটা কাছাকাছি আসতেই আঁতকে উঠল। সেই চাদর গায়ে দেওয়া লোকটা। এবার দৌড় দিয়ে সোজা ঘরে গিয়ে দরজা জানালা লাগিয়ে চুপচাপ বিছানার উপর শুয়ে রইল । উপর থেকে চিৎকার চেচাঁমিচি ক্রমাগত আসতেই লাগলো। সময় যেন কাটছে না। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে কখন ভোর হবে। কে যেন দরজা ধাক্কা দিল। জায়গা থেকে নড়ল না। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজায় ধাক্কা মারার আওয়াজ বন্ধ হল। চারদিক নীরব, উপর থেকে কোন আওয়াজও আসছে না। হঠাৎ দেখে দরজার নিচ দিয়ে রক্ত ঘরে ঢুকছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘরের মেঝে  রক্তে ভরে গেল।

চোখ বন্ধ করে ভগবানকে ডাকতে লাগল অর্ণব । ভোর প্রায় হয়ে এল। আলো ফুটতে শুরু করেছে, আকাশের পূর্বকোণে সূর্য উঁকি মারলো। হাসপাতালের উঠানে এসে দাড়াঁল সে। পুরোনো এই দুতলা হসপিটালের বাড়িটাকে  খুব অসহায় মনে হল। কে বলবে এই বাড়িটাই রাতে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। রাতের ঘটনাগুলোকে শুধুমাত্র দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে ।

 উপরে গিয়ে জং পরা তালাটাকে ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকলো অর্ণব। ভেতরটা অন্ধকার, মাকরশার জালে ভর্তি। সামনের ডেস্কের উপর ছোট একটা কার্ড চোখে পড়ল। ময়লার আস্তর জমে আছে সেটার উপর। পরিষ্কার করে দেখল তাতে লেখা – ডা: আব্দুল সিদ্দিকী।  ডেস্কের ড্রয়ার খুলে  একটা চিরকুট পেল। অস্পষ্ট হয়ে গেছে লেখাগুলো।  তাতে লেখা – "আমি ডাঃ আব্দুল সিদ্দিকী । এই রোগীটার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। আমার ভূলের প্রায়শ্চিত্ত আমি নিজেই করব। আমার মৃত্যুর জন্য কেউই দায়ী নয়।"

সারারাত্রির মানুষিক ধকলের পরে নিজের ঘরে এসে বসে অর্ণব। চোখটা লেগে আসে। কিন্তু একজন বয়স্ক ভদ্রলোকের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায়।

"নমস্কার। আমি এই গ্রামেই থাকি।সকালবেলা  হাঁটতে বেরিয়ে দেখলাম হসপিটালের দরজা তালা খোলা। শুনছিলাম এখানে নতুন ডাক্তারবাবু আসবেন। তাই দেখতে এসেছি। একসময় আমি এই হসপিটালের কেয়ার টেকার ছিলাম।"

"তাহলে তো এই হাসপাতাল সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন.."

"হ্যা.. এখানকার ডাক্তারবাবু ডাঃ আব্দুল সিদ্দিকী খুবই ভালো ছিলেন এবং রোগীদের  প্রচুর সেবা করতেন। সারাদিন হসপিটালে কেটে যেত তাঁর। ধ্যান জ্ঞান সবই ছিল গ্রামের গরীব মানুষগুলোকে সুস্থ রাখা। কিন্তু একদিন একটা ওষুধ না থাকায় , বহু চেষ্টা করেও একটি শিশুকে বাঁচাতে পারেন না , শিশুটি মারা যায়। চরম অনুশোচনায় ডাঃ সিদ্দিকী আত্মহত্যা করেন। এদিকে শিশুর মা বাবা ও গ্রামবাসীরা ক্ষেপে গিয়ে ডাক্তারবাবুর  লাশটাকে কবর দিতে দেয় না। হাসপাতালেই রেখে দেয়। তারপর থেকেই হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় ভূতের উপদ্রব। 

এরপরে অর্ণবের তত্ত্বাবধানে খুঁজতে খুঁজতে  দুতলার একটা বন্ধঘরের ভিতর থেকে পাওয়া গেল ডা: আব্দুলের কঙ্কাল। লোক ডেকে সেটাকে কবর দেওয়া হয়। আরেকটি ঘরে পাওয়া গেল ডাঃ আব্দুলের একটি ফটো। ছবিটা দেখে ডাঃ অর্ণবের চোখ কপালে। সেই লোক যে কালকে সাদা চাদর গায়ে দিয়ে ওকে সাবধান করেছিল।

এরপর কয়েক মাস কেটে গেছে কথা। হাসপাতালটাকে মেরামত করে নতুনভাবে সাজিয়ে ডাঃ অর্ণব রোগীদের চিকিৎসা করা শুরু করেছেন। আর কোন ভুতের উপদ্রব নেই। হাসপাতাল ভালোই চলছিল। 

একদিন বিকালে একজন মুমূর্ষ রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসে।লোকটাকে জরুরী ভিত্তিতে একটা ইনজেকশন খুব দ্রুত দিতে না পারলে লোকটাকে বাচাঁনো যাবে না। কিন্তু হাসপাতালে এই ইনজেকশনটা নেই। দুশ্চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ।

যখন কিছুতেই কোন ব্যবস্থা করতে পারছে না, হাল ছেড়ে দিয়েছে প্রায়,  হঠাৎ দেখে রোগীর বিছানার পাশেই পরে আছে ইনজেকশনটা, সঙ্গে  একটা চিরকুট। তার উপরে আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা "আর কোন রোগীকে  ওষুধের অভাবে মরতে দেব না। আমি তোমার সঙ্গে আছি..... ডঃ আব্দুল সিদ্দিকী"।

ReplyForward
Comment
Like
Tip icon image You can also reply to this email to leave a comment.

Unsubscribe to no longer receive posts from বাংলা গল্প ভাণ্ডারে আপনাদের স্বাগত .
Change your email settings at manage subscriptions.

Trouble clicking? Copy and paste this URL into your browser:
https://bengalishortstories78293105.wordpress.com/2023/05/05/%e0%a6%85%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4-%e0%a6%b9%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b2/

WordPress.com and Jetpack Logos

Get the Jetpack app to use Reader anywhere, anytime

Follow your favorite sites, save posts to read later, and get real-time notifications for likes and comments.

Download Jetpack on Google Play Download Jetpack from the App Store
WordPress.com on Twitter WordPress.com on Facebook WordPress.com on Instagram WordPress.com on YouTube
WordPress.com Logo and Wordmark title=

Learn how to build your website with our video tutorials on YouTube.


Automattic, Inc. - 60 29th St. #343, San Francisco, CA 94110  

at May 05, 2023
Email ThisBlogThis!Share to XShare to FacebookShare to Pinterest

No comments:

Post a Comment

Newer Post Older Post Home
Subscribe to: Post Comments (Atom)

Routine is where power begins.

Excellence is a habit, after all.  ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ‌ ...

  • [New post] Wiggle Kingdom: April Earnings on Spring Savings!
    Betsi...
  • [New post] Balancing the ‘E’ and ‘S’ in Environment, Social and Governance (ESG) crucial to sustaining liquidity and resilience in the African loan market (By Miranda Abraham)
    APO p...
  • Something plus something else
    Read on bl...

Search This Blog

  • Home

About Me

RelationDigest
View my complete profile

Report Abuse

Blog Archive

  • August 2025 (1)
  • July 2025 (59)
  • June 2025 (53)
  • May 2025 (47)
  • April 2025 (42)
  • March 2025 (30)
  • February 2025 (27)
  • January 2025 (30)
  • December 2024 (37)
  • November 2024 (31)
  • October 2024 (28)
  • September 2024 (28)
  • August 2024 (2729)
  • July 2024 (3249)
  • June 2024 (3152)
  • May 2024 (3259)
  • April 2024 (3151)
  • March 2024 (3258)
  • February 2024 (3046)
  • January 2024 (3258)
  • December 2023 (3270)
  • November 2023 (3183)
  • October 2023 (3243)
  • September 2023 (3151)
  • August 2023 (3241)
  • July 2023 (3237)
  • June 2023 (3135)
  • May 2023 (3212)
  • April 2023 (3093)
  • March 2023 (3187)
  • February 2023 (2865)
  • January 2023 (3209)
  • December 2022 (3229)
  • November 2022 (3079)
  • October 2022 (3086)
  • September 2022 (2791)
  • August 2022 (2964)
  • July 2022 (3157)
  • June 2022 (2925)
  • May 2022 (2893)
  • April 2022 (3049)
  • March 2022 (2919)
  • February 2022 (2104)
  • January 2022 (2284)
  • December 2021 (2481)
  • November 2021 (3146)
  • October 2021 (1048)
Powered by Blogger.