"ইউ সে মানি ক্যান নট বাই হ্যাপিনেস, হাঃ হাঃ হাঃ। হাবিবি কাম টু দুবাই.... " দুবাইয়ের শেখের ছেলের গলায় টিপিক্যাল আরবি টোনে প্রবল ভাবে ভাইরাল হওয়া এই কথাগুলো ইউ টিউবে শোনার পর থেকেই মনে মনে ঠিক করে নেই একবার দুবাই যেতেই হবে।দেখতে হবে সেই জায়গাকে যারা সারা পৃথিবীর মানুষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে যে টাকা পয়সা থাকলে সমস্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকেই মুষ্টিগত করা যায়। মরুভূমির ধূ ধূ প্রান্তরের উপর গড়ে তোলা যায় পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক শহর, প্রায় 900 মিটার উঁচু অট্টালিকা আর সমুদ্রের গতিপথকে রুদ্ধ করে তৈরী করা হয়েছে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত ও হোটেল।
গত দুবছর যাবদ করোনার জন্য বাড়ীতে বন্দী থাকার পরে হঠাৎ করে সুযোগটা এসে গেল। ছেলে অফিসের কাজ পাঁচ দিনের জন্য দুবাই যাবে। আমরাও ছেলের সঙ্গী হলাম। দুবাই এর সঙ্গে আবুধাবিকেও জুড়ে তৈরী হল আমাদের সাত দিনের সফরসূচী।
তেসরা মার্চ ২০২৩ বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওলা ভাড়া করে আমরা উদয়পুর সিটি স্টেশনে পৌঁছে গেলাম দশ মিনিটের মধ্যেই। দিতে হল ১৩০ টাকা।সেখান থেকে মেওয়ার এক্সপ্রেস। তৃতীয় শ্রেণীর বাতানুকুলিত কোচে সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে আমাদের ট্রেন ছাড়ল। ট্রেন রানাপ্রতাপনগর, মাওলী, চিত্তরগড় হয়ে 4 ঠা মার্চ সকাল সাড়ে সাতটার সময় এসে পৌছালাম দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন স্টেশনে। ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে আনুমানিক 200 মিটার হেঁটে পৌঁছে গেলাম দিল্লি মেট্রো রেলের সারাই কালে খান নিজামুদ্দিন স্টেশন । ওখান থেকে 30 টাকার টিকিট কেটে দুর্গাবাই দেশমুখ স্টেশনে পৌছালাম। সেখানে চলমান পথে বা ওয়াকেলেটার (Walkalater) এ প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে পিঙ্ক লাইনে পৌঁছলাম ধোলা কুয়া স্টেশনে।এখান থেকে আবার মেট্রো, গন্তব্য ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল 3 । ঘড়িতে তখন প্রায় বেলা বারোটা।
Go First এর G8-75 বিমানের ইকোনমি ক্লাসে আমরা চড়ে বসলাম। গন্তব্যস্থল সংযুক্ত আরব আমিরসাহির (United Arab Emirates / UAE) আবু ধাবির 2 নম্বর বিমানবন্দর। বিমান ছাড়ল ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ছ টায়, মাথাপিছু ভাড়া 9300 ভারতীয় টাকা।
যাত্রা করার আগেই অনলাইনে থাকার জায়গা ও বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গার টিকিট কেটে রেখেছিলাম। আর সঙ্গে নিয়েছি 1000 UAE মুদ্রা দিনহাম। ভারতীয় টাকায় তার মূল্য 24000 টাকা। মোটামুটি 1 দিনহাম =24 ভারতীয় টাকা। আর সঙ্গে ছিল আমার আর ছেলের ফরেক্স কার্ড। যদি কোনোভাবে খরচ 1000 দিনহামের বেশী হয়, সেটা মেটাবার জন্য। এছাড়া, মাথাপিছু 6900 টাকা দিয়ে ভিসা করা হয়েছে মেক মাই ট্রিপ (Make my trip ) সংস্থার মাধ্যমে। এরজন্য ট্রাভেল ইন্সুরেন্স করতে হয়েছে , মাথাপিছু 600 টাকা দিয়ে।
এরপরে দিল্লি এয়ারপোর্টের দো তলায় লাউঞ্জে ঘন্টা দেড়েক বিশ্রাম করে ও দারুন সব খাবার খেয়ে কাটিয়ে আবার ফিরে গেলাম নিচে সিকিউরিটি চেক আপের জন্য।
চার ঘণ্টা বিমানে যাবার পরে স্থানীয় সময় রাত্রি সাড়ে আটটার সময়(ভারতীয় সময়ে রাত্রি ১০ টায়) আমাদের বিমান আবু ধাবীর মাটি স্পর্শ করল। সংযুক্ত আরব আমিরসাহি (UAE) মোট সাতটি রাজ্যের সমষ্টি। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ধনী রাজ্য এই আবু ধাবি। প্রায় সত্তর শতাংশ অঞ্চল জুড়ে এই আবুধাবী।আরবদেশের অধিকাংশ তৈল খনি রয়েছে এই খানে। কিন্তু আবুধাবী বিমানবন্দরের দু নম্বর টার্মিনাল যেখানে আমাদের বিমান অবতরণ করল, সেটা দেখার পর কিছুটা হতাশ হলাম।
এত ছোট যে ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি চেক করার জন্য মোটে 2 টি কাউন্টার। না আছে কোন বসার জায়গা, দোকান বা কোন বিমান সংস্থার অফিস, না আছে কোন ডিউটি ফ্রী শপ। সাকুল্যে দুটি ঘর। সবাই কে বলা হল শুধুমাত্র পাসপোর্ট ও ফেরার টিকিট নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে। কাউন্টারের সামনে পৌঁছাবার পরে কাউকেই কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে পাসপোর্টে একটি স্ট্যাম্প লাগিয়ে ফটো তুলে শহরে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হল। কোন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এত সহজে ইমিগ্রেশন আগে কখনও হয়নি।
আশ্চর্য হলাম আরও যখন দেখলাম কনভেয়র বেল্ট কাজ করছে না।সবার লাগেজ পাশের ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। তার ভিতর থেকে সবাই যে যার লাগেজ খুঁজে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের লাগেজ খুঁজে নিয়ে বাইরে আসতেই দেখি মিস্টর কবির আমাদের দেখে এগিয়ে এসে নিজের পরিচয় দিলেন। কবির পাকিস্তানের নাগরিক, আবুধাবীতে গত 10 বছর গাড়ী চালাচ্ছেন।
প্রথমেই, চোখে পড়ল এখানকার ট্রাফিক সিস্টেম ভারতের ঠিক উল্টো। ইউরোপীয় দেশগুলির মত গাড়িতে লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ ও রাস্তায় গাড়ি ডান দিক দিয়ে যাচ্ছে। সিম কার্ডের খোঁজে প্রথমেই আমরা গেলাম এখানকার সবচেয়ে বড় মল ক্যারি ফোর এর রিটেল আউটলেটে , কিন্তু সেখানেও সিম কার্ড না পেয়ে 45 দিনহাম (ভারতীয় টাকার প্রায় 1080 টাকা) এর বিনিময়ে নিশান ল্যান্ডস্লাইডার গাড়ীতে করে প্রায় 25 কিমি দূরে 25th স্ট্রীটে ভিল্লা 358 এর স্টুডিও এপার্টমেন্টে পৌঁছে দিলেন । বিশাল চওড়া চওড়া তেল চকচকে রাস্তা। প্রত্যেকটা গাড়ির গতিবেগ 100 কিমি নীচে বলে মনে হল না। এখনে আগে থেকেই অনলাইনে বুক করা ছিল, ভাড়া 5400 ভারতীয় টাকা।একটা বিশাল হল। তাতে একটা ডাবল বেড আর একটা ফোল্ডিং সোফা কাম বেড। একটা বড় টেবিল আর দুটো চেয়ার। লাগোয়া ওয়াশ রুমে গরমজল আর ঠাণ্ডাজলের ব্যবস্থা আছে।
05.03.2023
সকাল বেলা স্নান করে ব্রেকফাস্ট সেরে সমস্ত লাগেজ নিয়ে সাড়ে আটটার সময় কবীরের সাথে রওনা হলাম। আগের দিন রাতে বুঝতে পারিনি, সকালে দেখলাম ওই ভিলাতে মোট ৮ টা ফ্ল্যাট রয়েছে। এই ফ্ল্যাটগুলোর একটাই বিরাট উঁচু সদর দরজা। সেন্সর দিয়ে লোহার দরজাটা খুলে কবীর গাড়ী নিয়ে রাস্তায় এসে পড়ল। লোহার দরজাটা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল।
এখন আমরা চলেছি আবু ধাবীর সবচেয়ে বড় দ্রষ্টব্য স্থল শেখ জায়েড গ্র্যান্ড মসজিদ।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সংযুক্ত আরব আমিরসাহির (UAE) রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত অন্যতম একটি উপাসনালয় । মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরসাহির (UAE) প্রয়াত রাষ্ট্র প্রধান শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাইয়ানের নামানুসারে।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, সংযুক্ত আরব আমিরসাহির (UAE) সবচেয়ে বড় মসজিদ। ৩৮ টি প্রখ্যাত ঠিকাদারি কোম্পানির ৩০০০ হাজার দক্ষ কর্মী নির্মাণ করেন এই মসজিদ। শেখ জায়েদ মসজিদের নকশায় পাকিস্তান, ভারত ও মরক্কের প্রভাব স্পষ্ট। এই মসজিদ নির্মাণে খরচ হয়েছে $৫৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাড়া বিশ্বের পর্যটকদের কাছেও এই মসজিদ অন্যতম জনপ্রিয় একটি জায়গা।
চার কোণে চারটি মিনারে পুষ্পশোভিত নকশা রয়েছে। যার উচ্চতা ৩৫১ ফুট(প্রায় ১০৭ মিটার)। নকশা নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী মার্বেল পাথর, মূল্যবান স্ফটিক পাথর,ও মৃৎশিল্প। শেখ জায়েদ মসজিদের নকশায় মুঘল এবং মুরিস মসজিদ, গম্বুজ বিন্যাস ও ফ্লোর বিন্যাসে বাদশাহি লাহোরে মসজিদ, মিনারে দ্বিতীয় হাসান মসজিদ (মরক্কো) এর প্রভাব স্পষ্ট প্রতীয়মান। আরবের ২০০ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার নমুনা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে মার্বেল পাথর, সোনা, আধা মূল্যবান পাথর, স্ফটিক ও মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপকরন ব্যবহার করে। সংযুক্ত আর আমিরাত , সিরিয়া এবং জর্দানের মোহাম্মদ ক্যালিওগ্রাফি ও নকশা চোখে পরে মসজিদের সর্বত্র। ডিজাইন ও নির্মাণে ইতালি, জার্মানি, মরক্কো, পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান, চীন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস ও সংযুক্ত আরব সহ অনেক দেশ থেকে কারীগর ও উপকারণ ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটিতে আছে ছোট-বড় সাত আকারের ৮২টি গম্বুজ। যা নির্মাণ করা হয়েছে স্বেত মার্বেল দিয়ে। মসজিদের বৃহত্তম গম্বুজের উচ্চতা ২৭৯ ফুট।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ অনেক বিশেষ এবং অনন্য উপাদান আছে: প্রধান প্রার্থনা কক্ষে ইরানের কার্পেট কোম্পানি তৈরি যা ইরানি শিল্পী আলী খালিদির ডিজাইনে বিশ্বের বৃহত্তম গালিচা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গালিচা ৬০৫৭০ বর্গ ফুট এবং এই কার্পেট এর ওজন ৩৫ টন। নিউজিল্যান্ড এবং ইরানের উল থেকে তৈরি করতে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছিল।
স্ফটিক সচ্ছ লক্ষ লক্ষ পাথরের তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম ঝাড়বাতিটি এই মসজিদে। জার্মানির তৈরি ঝাড়বাতিটির ব্যাস ১০ মিটার (৩৩ ফুট) এবং উচ্চতা ১৫ মিটার (৪৯ ফুট) মসজিদটির আঙিনা ১৭ হাজার বর্গমিটার মার্বেল মোজাইকের। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আয়তনের মার্বেল মোজাইক। প্রার্থনা হল ও আঙ্গিনা মিলিয়ে ৪০,০০০ মানুষ নামাজ পড়তে। জুম্মা ও ঈদে সর্বমোট দেড় থেকে দুই লাখ মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ নামাজ পাঠ করেন।
দেড় ঘন্টা ধরে ঘুড়ে দেখার পরে কবীরের গাড়িতেই চলে এলাম আল রাইজ বাস স্ট্যান্ডে।খরচ হল 25 দিনহাম (প্রায় 600 ভারতীয় টাকা)। তিন জনের জন্য তিনটি সিলভার নল কার্ড কিনে নিলাম। প্রত্যেকটা কার্ডে 100 দিনহাম করে ভরে নেওয়া হল। যার মধ্যে থেকে 94 দিনহাম ব্যবহার করা যাবে এখানকার মেট্রো রেলে, বাসে ও ট্রামে।এই বাস স্ট্যান্ড থেকেই কিছুক্ষনের মধ্যেই এসি বাসে রওনা হলাম ।আবু ধাবীকে বিদায় জানিয়ে আমাদের এবারের গন্তব্য দুবাইয়ের ইবন বতুতা মল বাস স্ট্যান্ড।ভাড়া মাথাপিছু 25 দিনহাম (প্রায় 600 ভারতীয় টাকা) । এই 118 কিমি দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে 1 ঘন্টা 40 মিনিট। এসে নামলাম মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবন বাতুতার নামাঙ্কিত ইবন বতুতা মলের সামনে।

প্রখ্যাত সুন্নী মুসলমান পরিব্রাজক ও চিন্তাবিদ ছিলেন ইবন বতুতা। তিনি ১৫ টি দেশে 30 বছর ধরে প্রায় ১২১০০০ কিমি পথ পরিভ্রমণ করে মুসলমান ধর্ম প্রচার করেন। এই পর্যটকের নামাঙ্কিত ইবন বতুতা মল ৫৬১০০০০ স্কয়ার ফুট জায়গার উপর গড়ে ওঠা এই মলে রয়েছে ২৫০ টি দোকান ও ৫০ টি রেস্তোরাঁ, রয়েছে ২১ টি থিয়েটার। দুবাইয়ের দিল্লি পাবলিক স্কুলের পাশে অবস্থিত এই মলটিকে ছয়টি অংশ বা কোর্টে ভাগ করা হয়েছে, সেগুলি হল আন্দালুসিয়া কোর্ট, চিনা কোর্ট, ইজিপ্ট কোর্ট, ইন্ডিয়া কোর্ট, পার্সিয়া কোর্ট ও তিউনিসিয়া কোর্ট।
সম্পূর্ণ মলটিকে সাজান হয়েছে প্রচুর প্রমান সাইজের খেজুর গাছ দিয়ে। মলের ছাদ টিকে দেওয়া হয়েছে রাতের আকাশের আকার। উপরের দিকে তাকাকেই দেখা যাবে প্রচুর তারা ও বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্র। বোঝা মুশকিল হবে যে এটা সত্যিকারের আকাশ নয়।
ওখান থেকে ভার্জিন (Virgin) মোবাইলের একটা সিম 100 দিনহাম দিয়ে নিয়ে নিলাম। এটা সাতদিনের জন্য আনলিমিটেড ইন্টারনেট ও মোট পঞ্চাশ মিনিট কথা বলা যাবে।
করিম এপের মাধ্যমে ট্যাক্সি বুক করে আমরা রওনা দিলাম দুবাইয়ের আগে থেকে বুক করা বিএনবি তে। ট্যাক্সি তে ভাড়া দিতে হল 32 দিনহাম (ভারতীয় মূল্যে প্রায় 770 টাকা)। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন বিভিন্ন দেশে যেমন ওলা বা উবের, মালয়েশিয়ায় যেমন গ্রাব, সংযুক্ত আরব আমিরসাহি (UAE) তে করিম। এর মাধ্যমেই এখানে ট্যাক্সি বা অন্যান্য গাড়ী বুক করতে হয়।
দুবাইয়ে থাকার জায়গা একেবারে দুবাই শহরের মাঝখানে, ইন্টারনেট সিটি মেট্রো স্টেশন থেকে মাত্র আধা কিমি দূরে অল বার্সা হাইটের নামক পনের তলার একটি বাড়ীর দশ তলায়। তিন বেডের একটি ঘর, রান্না ঘর ও লাগোয়া ওয়াশরুম। প্রতি দিনের ভাড়া 6000 টাকা।চার দিনের জন্য ভাড়া করা হয়েছে।
লাগেজ রেখে হাত মুখ ধুয়ে প্রত্যেকে এক গ্লাস ছাতুর জল আর কয়েকটা ড্রাই ফ্রুটস খেয়ে রওনা হয়ে গেলাম।ঘড়িতে তখন ঠিক সাড়ে চারটে। যে পথ ধরে এসেছিলাম, সেই রাস্তা ধরেই চলে এলাম ইন্টারনেট সিটি মেট্রো স্টেশনে। সেখানে নল কার্ড সোআইপ করে চলে এলাম শোভা রিয়েলিটি মেট্রো স্টেশনে। সময় লাগল 10 মিনিট। স্টেশন থেকে বেরিয়ে মিনিট পনের হেঁটে পৌঁছে গেলাম দুবাই মেরিনাতে।শোভা রিয়ালিটি স্টেশন থেকে বেরিয়ে ৩০০ ফুট চওড়া শেখ জায়েদ রোডের উপরে ফ্লাই ওভার দিয়ে যাবার সময় চোখে পড়লো রেড লাইন অর্থাৎ লাল রঙের দাগ দেওয়া রাস্তা। পাশে লেখা প্রতি ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগের কমে কোন গাড়ি চালানো যাবে না।
সমুদ্রের একটি খারি এই দুবাই মেরিনা। জলের উপরে রয়েছে প্রচুর ছোট ছোট নৌকা। আর দু দিকের পারে সারি দিয়ে বিশাল বিশাল বাড়ি।
এই বাড়িগুলির মধ্যেই রয়েছে দুবাইয়ের বিখ্যাত টুইস্টেড টওয়ার।বাড়িটি পেঁচানো ইলেক্ট্রিক তারের মত পেচিয়ে রয়েছে। পারে ভীড় করে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটক। দেখলাম দুবাই মেরিনার একেবারে জলের ধারে একটি কালো মডেলের তামাটে রঙের পোশাকে বিভিন্ন ভাবে ফটো তোলা হচ্ছে। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে একটু দূরেই থাকা ট্রাম স্টপেজ থেকে ট্রাম ধরে চলে এলাম JBR-1 এ। এবার নল কার্ড থেকে কাটা গেল 3 দিনহাম ।
ট্রাম থেকে নেমেই জলের পাশ দিয়ে বাধান রাস্তা দিয়ে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটার পরে এসে পৌছালাম দুবাই মেরিনা ধোঁও ক্রুজ যেখান থেকে ছাড়বে, সেই জায়গায়। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
সরু খালের দুদিকে বাধান খালের দুদিকে সারি দিয়ে রয়েছে একের পর এক ২৫/৩০ তলা উঁচু পাঁচতারা হোটেল। প্রত্যেকটির উপরে ইংরেজি তে EMAAR লেখা যা দুবাই শেখের অধীনস্ত সংস্থা গুলির নিশানা বহন করে।
আগে থেকেই অনলাইনে দুবাই মারিনা ধোঁও ক্রুজে তিনজনের টিকিট কাটা ছিল মাথাপিছু প্রায় 3000 ভারতীয় টাকা দিয়ে। ঠিক সাড়ে সাতটার সময় আমাদের অনলাইনে কাটা টিকিট মিলিয়ে আমাদের ক্রুজে ওঠার অনুমতি দেওয়া হল।আলো দিয়ে সাজানো দোতলা স্টিমার এর মত। নীচের তলা পুরোটা কাচ দিয়ে ঘেরা, এ সি চলছে আর ডেকের উপরে পুরো খোলা ছাদে চেয়ার টেবিল পাতা। আমাদের জায়গা হল কাচ দিয়ে ঘেরা হলের মধ্যে একটা চার জনের টেবিলে। উপর নীচ মিলিয়ে প্রায় ১০০ লোকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। সবার ওঠা হয়ে গেলে ঠিক আটটার সময় সবাইকে টেবিলে 200 মিলি কোল্ড ড্রিঙ্কস এর বোতল দিয়ে ওয়েলকাম করা হল। এর পরে যার যত ইচ্ছা কোল্ড ড্রিঙ্কস নেবার ব্যবস্থা ছিল। কয়েকজন বিদেশি অতিথি আলাদা ভাবে দিনহাম দিয়ে হার্ড ড্রিঙ্কস নিলেন। চল তে লাগল বিভিন্ন ইংরেজি গান।
ঠিক সাড়ে আটটার সময় ডিনার নেবার জন্য বলা হল। সারি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার (নিরামিষ ও আমিষ) সাজান ছিল। তার থেকে সবাই লাইন দিয়ে বুফে সিস্টেমে খাবার নিয়ে নিজেদের টেবিলে এসে খেয়ে নিলাম। খাবারের টেবিল সাজানোই ছিল শেষ পর্যন্ত। অসম্ভব পুষ্টিকর সুস্বাদু খাবার।

এর পরে ক্রুজ চলতে শুরু করল ঠিক রাত ন টায়। খালের দুপাশে আলোকমালায় সজ্জিত বিশাল বিশাল বাড়ীর বুক চিরে চলে গেছে এই খাল।তার মাঝে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকল আমাদের ক্রুজ। একে একে দুপাশ দুয়ে পার হয়ে যেতে থাকল সুদৃশ্য দুবাই মেরিনা ইয়ট ক্লাব, দুবাই মেরিনা মল, পাম জুমেরা বীচ ও একের পর এক ফাইভ স্টার হোটেল। একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল পৃথিবীর সব চেয়ে বড় গোলাকার নাগরদোলা যেখানে লেজারের সাহায্যে একের পর এক আকৃতি ও ডিজাইন ফুটে উঠছিল। এই ভাবে প্রায় আধ ঘণ্টা চলার পরে আমাদের ক্রুজ এসে পৌঁছাল আরব সাগরে। চারিদিকে শুধু জল আর জল। ততক্ষণে, আমরা ডেকের উপরে চলে এসেছি চারিদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। সবারই হাতে কোল্ড ড্রিঙ্কস বা গরম কফি বা রোস্টেড চিকেন । শুরু হয়ে গেছে আলোয় উদ্ভাসিত ড্রেস পরে আরবি গানের ছন্দের তালে তালে আরবি টানোৱা (Tanoura) নাচ, তালে তালে নাচতে শুরু করেছে ক্রুজে থাকা প্রায় সবাই।

লিখে বোঝান যাবে, এ অভিজ্ঞতার কথা। এরকম যে হতে পারে, নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। অসাধারণ এই অভিজ্ঞতা। যারাই দুবাই ঘুরতে যাবেন, তাদের কাছে অনুরোধ অবশ্যই একটা সন্ধ্যা ক্রুজে ভ্রমণের জন্য রাখার জন্য, না হলে দুবাই ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
স্বপ্নের জগতে বিচরণ করার পরে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আমাদের নামিয়ে দেওয়া হল, দুবাই মেরিনা বীচে। ক্রুজেই আমাদের সঙ্গে আলাপ হল একটি বাংলাদেশী সার্ভিস বয়ের সঙ্গে। সেই আমাদের শর্টকাটে কাছের মেট্রো স্টেশনে যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিল। শেষ মেট্রো রাত এগারোটায়। আমরা ক্রুজ থেকে নেমে প্রায় এক কিমি রাস্তা এসে পৌছালাম নিকটবর্তী শোভা রিয়ালিটি মেট্রো স্টেশনে। সেখান থেকে পাঁচ দিনহামের বিনিময়ে পৌঁছে গেলাম ইন্টারনেট সিটি মেট্রো স্টেশন। এই ভাবেই স্বপ্নের মধ্য দিয়ে শেষ হল আমার দুবাই ভ্রমণের প্রথম দিন।
06.03.2023
সকালবেলা স্নান করে একটা সলিড ব্রেকফাস্ট করে সবাই সাড়ে ন টা নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম। আমাদের আজকের প্রথম গন্তব্য স্থান হল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু অট্টালিকা বুর্জ খলিফা। সেই উদ্দেশ্যে আমরা ইন্টারনেট মেট্রো স্টেশন থেকে চলে এলাম বুর্জ স্টেশনে। সেখান থেকে ওয়াকালেটার করে প্রায় এক কিমি যাওয়ার পরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মল দুবাই মলে এসে পৌছালাম।
মলের ভিতর প্রায় 15 মিনিট যাবার পরে এসকালেটার করে তিন তলা থেকে এক তলায় এসে পৃথিবীর সমস্ত নামি দামী ব্রান্ডের শোরুম দেখতে দেখতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অকুয়ারিয়ামের সামনে এসে পড়লাম। সেখান থেকে একটু এগিয়ে 6 নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে এসে পড়লাম আমাদের গন্তব্য বুর্জ খলিফার সামনে।
বুর্জ খলিফা হলো দুবাইয়ে অবস্থিত একটি আকাশচুম্বী ভবন, যা ২০১০ সালে উদ্বোধনের আগে বুর্জ দুবাই নামে পরিচিত ছিল। 163 তালা উঁচু এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে পরিচিত। মোট উচ্চতা ৮২৯.৮ মিটার (২,৭২২ ফুট) এবং ছাদের উচ্চতা (অ্যান্টেনা ব্যতীত, তবে ২৪২.৬ মিটার চূড়া সহ[২]) ৮২৮ মিটার (২,৭১৭ ফুট)।
বুর্জ খলিফার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে, এর বাইরের অংশের কাজ পাঁচ বছর পর ২০০৯ সালে শেষ হয়। ভবনটির প্রাথমিক কাঠামোটি শক্তিশালী কংক্রিট এবং কিছু স্ট্রাকচারাল ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।ডাউনটাউন দুবাই নামে একটি নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসাবে ২০১০ সালে ভবনটি চালু হয়। বড় আকারের ও বৈচিত্র্যময় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এর ডিজাইন করা হয়েছিল। সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল তেল-ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বৈচিত্র্য আনা এবং দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সম্মানে ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে। ভবনটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে এর নাম সহ অসংখ্য উচ্চতার রেকর্ড ভেঙেছে।
স্কিডমোর, ওইংস অ্যান্ড মেরিল এর অ্যাড্রিয়ান স্মিথের নেতৃত্বে একটি দল বুর্জ খলিফার নকশা করেছিল। এই অঞ্চলের ইসলামিক স্থাপত্য যেমন সামারার গ্রেট মসজিদ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নকশার করা হয়েছে। আবাসিক এবং হোটেলের স্থান অপ্টিমাইজ করার জন্য Y-আকৃতির ত্রিধা জ্যামিতিক মেঝে ডিজাইন করা হয়েছে। কাঠামোটিতে দুবাইয়ের গরম গ্রীষ্মের তাপমাত্রা সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এতে মোট ৫৭টি লিফট এবং ৮টি এসকেলেটর রয়েছে।
বুর্জ খলিফা দর্শনের পরে একই পথ ধরে বুর্জ স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে চলে এলাম ADCB স্টেশনে। সেখান থেকে ট্যাক্সি ধরে চলে এলাম দুবাই ফ্রেমে। ভাড়া পড়ল সাড়ে আঠার দিনহাম যার মূল্য ভারতীয় টাকায় প্রায় সাড়ে চারশ টাকা )।
দুবাই এর জাবিল পার্কে ফটো ফ্রেমের আকারে তৈরি এই ফ্রেম উচ্চতায় 150.24 মিটার ও প্রস্থে 95.53 মিটার। 18 ক্যারেট সোনার দিয়ে মোড়া পৃথিবীর এই বৃহত্তম ফ্রেম পুরোনো দুবাই ও সর্বাধুনিক দুবাইকে আলাদা করে রেখেছে।এর ভিতরে রয়েছে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, মিউজিয়াম ও মনুমেন্ট। এটি দর্শকদের খুলে দেওয়া হয় জানুয়ারী, 2018 সালে।
সকাল থেকে ঘুরতে ঘুরতে সবাই খুব পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। খিদেও পাচ্ছি। পাশেই দেখা গেল ম্যাক্স এর একটা রিটেইল আউটলেট। সেখান থেকে কেক,চিপস আর মুড়িমাখা। ADCB স্টেশনের চেয়ারে বসে আমরা খেয়ে নিলাম। ফেরার পথে ADCB স্টেশন থেকে মেট্রো ধরে চলে এলাম এমিরেটস টাওয়ার স্টেশনে। এবারের গন্তব্য স্থান মিউসিয়াম অফ ফিউচার।
মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার উদ্ভাবনী এবং ভবিষ্যতবাদী চিন্তা, পরিষেবা এবং পণ্যগুলির জন্য একটি প্রদর্শনী স্থান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের shekh jayed roade অবস্থিত জাদুঘরের তিনটি প্রধান উপাদান রয়েছে: সবুজ পাহাড়, ভবন এবং শূন্যতা।দুবাই ফিউচার ফেডারেশন কতৃক প্রতিষ্ঠিতএই জাদুঘরটি ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে দুবাই সময় সন্ধ্যা ৭ টায় খোলা হয়েছিল। মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচারের ভবন স্থাপনাকে বিশ্বের অন্যতম জটিল কাঠামো বলে বিবেচনা করা hoy।
এই জাদুঘরের mul লক্ষ্য হল প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন, বিশেষ kore রোবোটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষেত্রে। জাদুঘরটিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্মার্ট শহর, জ্বালানি এবং পরিবহন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিবেদিত উদ্ভাবন ল্যাব ache। এটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নতুন উদ্ভাবনকে সহজ করবে এবং পরীক্ষা করবে।
মিউজিয়াম অফ ফিউচার থেকে বেরিয়ে আবার মেট্রো ধরে এবার চলে এলাম মল অফ এমিরেটস মেট্রো স্টেশনে, এবার নল কার্ড থেকে আবার কেটে গেল 5 দিনহাম। মেট্রো স্টেশন থেকে বাইরে এসেই 105 নম্বর বাস স্ট্যান্ড। এই এসি বাসে করে মিনিট 20 চলার পর আমরা পৌঁছে গেলাম মিরাকল গার্ডেন, বাস ভাড়া 10 দিনহাম কেটে গেল নল কার্ড থেকে। মিরাকল গার্ডেনের এন্ট্রি পাস আগে থেকে অনলাইনে করা ছিল। প্রত্যেকের এন্ট্রি পাসের মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় 1650 টাকা।
দুবাই মিরাকল গার্ডেন আসলে একটি বিশাল ফুলের বাগান।72000 স্কোয়ার জমির উপরে 25 মিলিয়ন ফুল ও 250 মিলিয়ন গাছ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এই ফুলের বাগান। এই বাগান প্রত্যেক বছর অক্টোবর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রচন্ড গরমের জন্য মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
মিরাকেল গার্ডেন তিনখানা গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের সম্মানে ভূষিত।
প্রথমত, এটি যে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ফুলের বাগান সেকথা আগেই বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, A380 বিমানের আদলে ফুল দিয়ে তৈরী কাঠামোটি পৃথিবীর মধ্যে অবস্থিত সর্ববৃহৎ ফুলের কাঠামো।
তৃতীয়ত, 35 টন ফুল দিয়ে তৈরী 18 মিটার উঁচু মিকি মাউস পৃথিবীর সর্বোচ্চ উঁচু ফুল দিয়ে তৈরী স্থাপত্য।
এছাড়াও , 2022 এর ফুটবল বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে তৈরী করা হয়েছে একটি স্পেশাল বিশ্বকাপ বাগান যেখানে রয়েছে ফুল দিয়ে তৈরী অংশগ্রহণকারী প্রতিটি জাতীয় পতাকা।
এখানে ঘুরে দেখতে প্রায় দু ঘন্টা লেগে গেল।
এখান থেকে করিম অপের মাধ্যমে ট্যাক্সি বুক করে আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম গ্লোবাল ভিলেজ। বাইরের পার্কিং প্লেসে দেখা গেল যতদূর চোখ যায় শুধু গাড়ী আর গাড়ী। শোনা গেল এখানে একসাথে 18300 গাড়ি পার্কিং করা সম্ভব। মাথাপিছু 25 দিনহামের টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে চারিদিকের আলোর ঝিকমিকিতে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। 2018 সালে শুরু হওয়া 83000 হেক্টর জমির উপর পৃথিবীর 92 টি দেশের প্যাভিলিয়ন রয়েছে।
প্রত্যেকটি প্যাভিলিয়নের ভিতরে রয়েছে সেই দেশের খাবার দাবার, পোশাক পরিচ্ছদ এর স্টল আর রয়েছে একটি স্টেজ যেখানে সেই দেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে।ইরানের স্টেজে সেই দেশের একটি নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ভারতীয় প্যাভিলিয়নে তখন একটি ভারত নাট্যম এর অনুষ্ঠান চলছিল। শোনা গেল এখানে শাহরুখ খান, নেহা কক্কর, আতিফ ইসলাম, গুরু রানধাওয়া প্রভৃতি শিল্পী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গ্লোবাল ভিলেজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতি, পোশাক, গান বাজনা, খাওয়া দাওয়া র সঙ্গে পরিচয় করতে করতে কখন যে দু ঘণ্টা কেটে গেল বোঝা গেল না। রাত ন টা নাগাদ ওখান থেকে 106 নম্বর বাসে চলে এলাম মল অফ এমিরেটস মেট্রো স্টেশন, ভাড়া 10 দিনহাম। এখান থেকে মেট্রো ধরে আবার চলে এলাম দুবাই মলের ভিতর দিয়ে বুর্জ খলিফা এখানকার পৃথিবী বিখ্যাত ফাউন্টেন শো দেখার জন্য।
প্রতি আধঘণ্টা অন্তর 5 মিনিটের সঙ্গীত,জল আর এলইডি আলোর খেলা যা দেখতে সারা পৃথিবীর লোক উপচে পরে। আলাদা আলাদা ইংরেজি গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে 30 একর জমির উপর এই লেকে আলাদা আলাদা ভাবে ফোয়ারা জল আর আলোর খেলা চলছিল।
গানের তালে জলাশয়ের 22 হাজার গ্যালন জল মাঝে মাঝেই 140 মিটার পর্যন্ত উঠে যাচ্ছিল।
রাত 11 টার মেট্রো ধরে আবার ইন্টারনেট সিটি মেট্রো স্টেশন (ভাড়া 5 দিনহাম)। নলকার্ডের টাকা কমে আসছে দেখে প্রত্যেকের কার্ডে আরও 30 দিনহাম করে রিচার্জ করে নেওয়া হলে। স্টেশনথেকে হেঁটে বিএনবি তে ফেরার পথে একবার ম্যাক্স আর ক্যারি ফোর এর রিটেল আউটলেট থেকে কিছু চকলেট আর খেজুর কেনা হল। ক্যাশ কাউন্টার এসে আবার চমক। আলাপ হল দিল্লি থেকে চাকরী করতে আসা অল্পবয়সী দুটি মেয়ের সঙ্গে। জানতে পারলাম প্রায় তিন বছর যাবত তারা এখানে কাজ করছে। খাওয়া দাওয়া , ইউনিফর্ম, থাকার জায়গা বাদ দিয়ে প্রত্যেকের মাসিক মাইনে 1250 থেকে 1600 দিনহাম (30000 টাকা থেকে 40000 টাকা)। শেষ হল আরেকটি দিন।
07.03.2023
অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। পাঁচ মিনিট হেঁটে 83 নম্বর বাসে করে পনের মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লুলু আল বার্সা তে ( বাসাভাড়া মাথাপিছু 10 দিনহাম)। বিশাল উঁচু উঁচু কয়েকটা বাড়ী ও একটি স্কুলের পাশ দিয়ে মিনিট দশেক হেঁটে পৌঁছে গেলাম আল বার্সা হাইটে মনোরেল স্টেশনে। গন্তব্য আরব সাগরের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ও বিলাসবহুল সাত তারা হোটেল আটলান্টিস। মনো রেলের দশ কিমি লম্বা 20 মিনিটের রাস্তার বেশীর ভাগ চলে গিয়েছে আরব সাগরের মধ্যে দিয়ে।
দুদিকে সমুদ্র আর মাঝে মাঝে সমুদ্রের বুক চিরে দুদিকে পিচের পাকা রাস্তা চলে গেছে অনেকটা খেজুর গাছের পাতার মত।এই ট্রেন লাইন এসে শেষ হয়েছে পাম জুমেরা দ্বীপে, সেখানেই রয়েছে হোটেল আটলান্টিস। হোটেলের পিছন দিয়ে বয়ে চলেছে আরব সাগরের নীল জল।
22 তলা উঁচু এই হোটেলে রয়েছে মোট 1548 টা ঘর , তিনদিকে রয়েছে হোটেলের নিজস্ব বীচ। কোন সমুদ্র কে বুজিয়ে খেজুর পাতার আকার দিয়ে সেখানে 22 তলা উঁচু হোটেল তৈরী করা সত্যিই না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আশেপাশে সমুদ্রের পাশে এক ঘন্টা কাটিয়ে আবার ফিরে এলাম তিন কামরার মনোরেলে। ট্রেনের ভাড়া মাথাপিছু 40 দিনহাম ( 950 টাকা)। শোনা গেল এইখানেই রয়েছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির বিশাল প্রাসাদ ও সমুদ্র সৈকত।
মনোরেলে ফিরে এলাম আল বার্সা হাইটে। তখন প্রায় দুপুর দেড়টা। প্রচন্ড রোদে না হেঁটে ফেরার সময়ে করীম অপের মাধ্যমে ট্যাক্সিতে চলে এলাম লুলু আল বার্সা মলের সামনে , ভাড়া 27 দিনহাম ( প্রায় 650 টাকা)। এখান থেকে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য স্থল দুবাই মরুভূমি যাবার পিক আপ বাস ছাড়বে। ডেজার্ট সাফারি আগে থেকেই অনলাইনে বুকিং করা ছিল। মাথাপিছু 1800 টাকা। এর মধ্যে রয়েছে দুবাই শহর থেকে প্রায় 110 কিমি দূরে শারজা বর্ডারের কাছে মরুভূমিতে এসি গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া ও ফেরত নিয়ে আসা, উটের পিঠে চড়ে একটু ঘোরা, মহিলাদের হাতে মেহেন্দি, ডিনার, বেলি ডান্স ও আগুন নিয়ে খেলা।
গাড়ী এল ঠিক দুপুর আড়াইটার সময়। 18 সিটের এসি গাড়ী। ড্রাইভার মজিদ প্রত্যেকের টিকিট পরীক্ষা করে গাড়ীতে তুলে নিচ্ছিল। যাত্রীদের মধ্যে দু তিনজন ছাড়া কাউকেই স্থানীয় বলে মনে হয় না।সবাইকে নিয়ে গাড়ী রওনা হল ঠিক তিনটের সময়। সিল্কের মত মসৃন চওড়া রাস্তা দিয়ে দেড় ঘন্টা চলার পরে পৌঁছে গেলাম শারজার কাছাকাছি। এর মধ্যে শেষের প্রায় দশ কিমি চারিদিকে শুধু বালি আর বালি।
মাঝে মাঝে শুধু উঁচু উঁচু বালির পাহাড় আর কাঁটা গাছের ঝাড়। এরই মাঝখান দিয়ে তৈরী করা হয়েছে গাড়ী চলার মত পিচের রাস্তা। শেষের এক কিমি বালির উপর দিয়ে এসে বালির উপরে এক জায়গায় থামল। এখানে দেখা গেল সারি দিয়ে অনেকগুলো ছ সিটের রেঞ্জ রোভার গাড়ি দাঁড়িয়ে। তারই একটায় নিয়ে গিয়ে আমাদের বসান হল। ওই গাড়িতেই পাক্কা আধা ঘন্টা উঁচু নীচু বালির উপর দিয়ে চলার পরে তিনদিকে ঘেরা একটা বিশাল টেন্টের সামনে এসে চলে এলাম।
এই আধঘণ্টা বালির মধ্যে ফুলস্পিড গাড়িতে একবার উপরে একবার নীচে চলতে চলতে মনে হচ্ছিল কতক্ষণে এই যাত্রাপথ শেষ হবে, এত ভয় করছিল। অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

চারিদিকে শুধু বালি আর বালি। যতদূর চোখ যায় শুধু উঁচু নীচু বালির স্তুপ আর কাঁটা গাছ। কয়েকজন উটে বসে এদিক ওদিক ঘুরতে গেল। আমরা গেলাম না। টেন্টের ভিতরে মাঝখানে একটা স্টেজ তৈরী করা রয়েছে। স্টেজের সামনে আর পিছনে সার দিয়ে পাতা প্রতি ছয় জনের জন্য একটি করে টেবিল আর প্রত্যেকের মেঝেতে পাতা গালিচায় বসার জন্য মোটা মোটা গদি। সবশুদ্ধু প্রায় তিনশ লোক বসতে পারে। স্টেজের পিছন দিকে কিছু সোফা পাতা রয়ে ভি আই পি গেস্টদের জন্য। এর জন্য মাথাপিছু 50 দিনহাম অতিরিক্ত দিতে হবে। টেন্টের ভিতরে প্রবেশ করেই বাঁ দিকে রয়েছে চা কফি ও খাবার জলের কাউন্টার। সেখানে রাখা আছে সিল করা 200 মিলি জলের প্লাস্টিক বোতল। রয়েছে চা, কফি, চিনি ও মিল্ক পাউডারের স্যাচেত। নিজের ইচ্চা মত মিশিয়ে যতবার ইচ্চা চা কফি খাওয়া যাবে।মহিলাদের জন্য রয়েছে মেহেন্দি করার একটা ঘর। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ অন্ধকার নেমে এলে স্টেজের আলো জ্বলে উঠে শুরু হল অনুষ্ঠান। আরবিক গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচ, বেলি ডান্স, ইংরেজী গানের সঙ্গে নাচ, আগুন নিয়ে নাচ।

তবে সবচেয়ে মন কেড়ে নিল টেন্টের বাইরে থাকা একটি বালির ঢিপির উপরে হাতে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে উটের পিঠে করে কয়েকজনের লাইন করে গিয়ে লোহা দিয়ে বানান ইংরেজির DUBAI তে আগুন লাগিয়ে আরবিক ডান্স। এই দৃশ্য বার বার আরব্য রজনীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। এরই মাঝখানে লাইন দিয়ে কন্টিনেন্টাল ডিনার খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। নিরামিষ কিন্তু যারা আমিষ খাবার পছন্দ করে তাদের জন্য রোস্টেড চিকেন এর ব্যবস্থা। সাড়ে আটটার সময় আরবের মরুভূমিকে বিদায় জানিয়ে যে পথে গিয়েছিলাম সেই পথেই ফিরে এলাম দুবাই শহরে, তবে এবার নামলাম মল অফ এমিরেটস মেট্রো স্টেশনের সামনে।সেখান থেকে মেট্রোতে আবার ইন্টারনেট সিটি মেট্রো স্টেশন (ভাড়া : 5 দিনহাম) এবং হেঁটে আমাদের দুবাইয়ের বাসস্থানে। শেষ হল আরেকটি দিন, শেষ হতে চলল দুবাইয়ের শেষ রজনী।
08.03.2023
সকাল ১১ টা নাগাদ আবার সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বিদায় জানালাম আল বার্সা হাইটের দশ তলার ফ্ল্যাট নম্বর 1023 কে। যাবার আগে, ফ্ল্যাটের মিশরীয় মালিক করিম এসে দেখা করে বিদায় জানিয়ে গেলেন।
আমাদের আজকের গন্তব্য পুরোনো দুবাইয়ের দেইরা (Deira) অঞ্চলে অবস্হিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সোনার বাজারে, গোল্ড সুক। মেট্রোর রেড লাইন ধরে ইন্টারনেট সিটি মেট্রো স্টেশন থেকে প্রথমে ইউনিয়ন স্টেশন। এরপর ইউনিয়ন স্টেশন থেকে গ্রীন লাইন ধরে গোল্ড সুক স্টেশনে (ভাড়া 8 দিনহাম) এসে ওভারব্রিজ পেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে পৌঁছে গেলাম সোনার বাজারে। যদিও যে কোন বড় শহরের মত সোনার দোকান দুবাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় পাঁচ দশক ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে সেগুলিকে একত্রিত করে এখানে দুবাই গোল্ড সুক বানান হয়েছে। রয়েছে প্রচুর ছোট ছোট গলি আর যেদিকে তাকান যায় শুধু সোনার দোকান।
জানা গেল, এখানে রয়েছে প্রায় 380 টি সোনার দোকান।রয়েছে সোনা দিয়ে তৈরি সর্ববৃহৎ সোনার গয়না যার ওজন ৬৪ কিলো। দোকানের বাইরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রিকাল হোর্ডিং যেখানে অধিকাংশ বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন ভারতীয় বলিউড অভিনেত্রীরা, রয়েছেন করিসমা কাপুর, দীপিকা, কাজল প্রমুখ ।

এখান থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে চলে এলাম আল রাস মেট্রো স্টেশনে। সেখান থেকে গ্রীন লাইন ধরেই বুর্জমান স্টেশনে চলে এলাম মিউজিয়াম অফ ফিউচারকে আর একবার দেখার জন্য (মেট্রো ভাড়া : 8 দিনহাম) ঘুরে ফিরে ঘন্টাখানেক কাটিয়ে রেড লাইন ধরে চলে এলাম দুবাইয়ে আমাদের দুবাইয়ের অন্তিম গন্তব্য স্থান দুবাই টার্মিনাল 1 এ (ভাড়া 5 দিনহাম)। তখনও টি জনের নল কার্ডে দেখি 8 দিনহাম করে পরে রয়েছে। মেট্রোর আসিস্টেন্স কাউন্টারে নিয়ে গিয়ে নল কার্ড সারেন্ডার করে দিলাম। ৫ দিনহাম কেটে ৩ দিনহাম করে পেয়ে গেলাম।এখান থেকেই রাত দশটার সময় রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নম্বর AI 996 যেটায় করে আমরা পৌঁছে যাব আবার নিজেদের দেশে , নয়া দিল্লী বিমান বন্দরে যার জন্য ভাড়া দিতে হবে মাথাপিছু 8300 টাকা। আশ্চর্য হলাম সিকিউরিটি চেক অপের সময়। আমাকে আর ছেলেকে গায়ে হাত দিয়েই কেউ পরীক্ষা করল না। অফিসার ভিতরে চলে যেতে বললেন। তবে আমার স্ত্রীর হাতের শাখা পলা ও দু গাছা সোনার চুড়ি খুলে দিতে বলল, দু মিনিটের মধ্যে মহিলা পুলিশ কোন এক যন্ত্রে ওগুলো পরীক্ষা করে আবার ফেরত দিয়ে দিলেন।
বিশাল ডিউটি ফ্রি শপের মধ্যে দিয়ে যাবার সময় দেখলাম BMW একটি গাড়ি ওখানে সাজান রয়েছে। অবাক হবার আরও বাকি ছিল। গেট নম্বর D-17 এর সামনে আসতেই আমাদের 4 কামরার একটি মনরেলে করে যেতে বলা হল। সেই ট্রেনে করে প্রায় দশ মিনিট যাবার পরে এসে পৌছালাম মূল লাউঞ্জে।
এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নম্বর AI 996 হল এয়ারক্রাফট টাইপ 788 এর বিমান। এই বিমানগুলি অন্য বিমানগুলির চেয়ে অনেক বড় হয়। প্রায় ৩০০ যাত্রীর বসার ব্যবস্থা থাক। বিসনেস ক্লাসে প্রতিটি লাইনে 2 জন করে তিনটি রো এবং ইকোনমি ক্লাসে প্রতিটি লাইনে 3 জন করে তিনটি রো রয়েছে। বিমানের মাঝখানে রয়েছে দুটি অতিরিক্ত ওয়াশরুম /লাভাটরি যেখানে হুইল চেয়ারে বসে ভিতরে যাবার ব্যবস্থা থাকে । .দুবাইয়ের সময় রাত ঠিক 12.05 মিনিটে প্লেন দুবাই ছেড়ে ভারতীয় সময় ভোর 4 বেজে 45 মিনিটে ভারতের মাটি স্পর্শ করল।
শেষ হল আমাদের দুবাই ভ্রমণ। কিন্তু শেষ হয়েও যা শেষ হল না তা হল দুবাইয়ের স্মৃতি। বুদ্ধি দিয়ে মানুষ একটা মরুভূমি শহরকে কি তৈরী করা যায় তাঁরই দৃষ্টান্ত এই দুবাই। আড়াই দশকে দুবাইয়ের এই ট্রান্সফরমেশন সব দেশের কাছে দৃষ্টান্তমূলক।
No comments:
Post a Comment