ছেলের স্কুলে প্যারেন্ট টিচার মিটিঙে বসেই রঞ্জনের পিঠটা চুলকাতে শুরু করল পিঠের চুলকানির মানে হলো এখন একটা অ্যাকশন না করলেই চলবে না, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, গত সপ্তাহের কাজটা ঘেঁটে গেছিল বলে এই সপ্তাহটা একটু চেপে থাকবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু চুলকানিটা এবারে জ্বালিয়ে খাবে,যতক্ষণ না একটা অ্যাকশন করছে রঞ্জন, ততক্ষণ এটা কমবে না। আর সে কি চুলকানি! হয়তো বাইক চালাচ্ছে, শুরু হয়ে গেল।তখন বাইক থামিয়ে চুলকাতে হবে। অথবা হয়ত বাজার থেকে ফিরছে, দুই হাতে দুটো ব্যাগ, ব্যাস, শুরু হয়ে গেল। আবার হয়ত বা বসের সামনে বসে আছে, টার্গেট হয়নি বলে বস ঝাড়ছে, এমন সময়ে যদি শুরু হয়ে যায়, তখন কি করার আছে? বেয়াড়া সময় বেয়াড়া জায়গায় চুলকাবে। আর এই চুলকানিও আস্তে আস্তে বাড়বে, যতক্ষণ না কিছু একটা চুরি করছে। যা হোক কিছু একটা চুরি করতে হবে। চুরিটা করে ফেল্লেই চুলকানি ম্যাজিকের মতো কমে যাবে।
গত সপ্তাহেই অফিসে বসের সঙ্গে নতুন সেলস টার্গেট বিষয়ক একটা ডিসকাশন সেরে সবে চেম্বারের বাইরে পা রেখেছে, চুলকানিটা মারাত্মক ভাবে শুরু হয়ে গেল। সামনেই টেবিলে বসে ল্যপটপে কিছু টাইপ করছিল বসের সুন্দরী পিএ অনামিকা। দু একটা কথা বলার পর অনামিকা ল্যাপটপের কি বোর্ডের দিকে তাকিয়ে একটু অন্যমনস্ক হতেই তার পাশে রাখা ভ্যেনিটি ব্যাগ থেকে লিপস্টিক সরাতে গিয়ে ধরা পড়ে গেছিল প্রায়।
"এই, তুমি আমার ব্যাগ ঘাঁটছ কেন শুনি, লিপস্টিক নিয়ে তুমি কি করবে?"
প্রশ্নবাণের উত্তরে দেঁতো হেসে কোন রকমে,"আরে আমি তো নেল কাটারটা খুঁজছি" বলে ছাড়ান পায় রঞ্জন।
চুলকানিটা হয়ও বেয়াড়া জায়গায়। পিঠের ঠিক মাঝখানে, অগম্য একটা জায়গায়, যাকে বলে নো ম্যান'স ল্যান্ড। কোন মানুষের পক্ষে ওখানে হাত নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বহুদিনের অনুশীলনে রঞ্জন এইটুকু দক্ষতা অর্জন করেছে যে, সে চোখ বন্ধ করেও দেয়ালের কোণায়, বা দরজার চৌকাঠে পিঠ ঘষে একটু আরাম পেতে পারে। কিন্তু সে কতক্ষণের জন্য? আবার যেই হাতটা একটু আটকা থাকবে, সাথে সাথে চুলকাতে শুরু করবে। তাই ও সবসময় ব্যাগে পুরী থেকে নিয়ে আসা একটা মোষের শিঙের হাত রাখে।
আর একবার বাড়িতে চুলকানি কিছুতেই কম না হওয়াতে শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর নতুন কেনা গোলাপি রঙের রুমাল নিজের অফিস ব্যাগে রাখার পর তার চুলকানিটা কমে। পরে অবশ্য অফিসে বন্ধু বান্ধবরা তার ব্যাগে এটা দেখে ফেলাতে, তাকে চরম অপদস্থ হতে হয়েছিল।
কিন্ত ছেলের স্কুলে বসে তো আর পিঠ চুলকানো যাবে না, বা দেয়ালে পিঠ ঘষাও যাবে না। এক্ষুনি কিছু একটা না করলেই নয়। ভাবতে ভাবতেই ভিতর থেকে ডাক এসে গেল।
ক্লাস টিচারের সামনে গিয়ে বসল রঞ্জন। "মিঃ পাকরাশী, আপনার ছেলে এমনিতে ভালো ছাত্র, কিন্তু বড্ড বেশী অমনোযোগী। ক্লাসে আরো একটু মনোযোগ দেওয়া দরকার ওর। সায়েন্স সাবজেক্টসে ভালো করছে, কিন্তু ল্যাঙ্গুয়েজ গ্রুপে আরো সময় দিতে হবে। পিটি ক্লাসেও আপনার ছেলে কিন্তু ঠিক মতো অংশগ্রহণ করছে না।" ম্যাডাম এইসব বলে যাচ্ছেন।
রঞ্জন এক কান দিয়ে ঢোকাচ্ছে, আর এক কান দিয়ে বার করে দিচ্ছে। ওর নজর শুধু ম্যাডামের পেনের দিকে, যেটা রাখা আছে গার্জিয়ান অ্যাটেনডেন্স লিস্টের পাশে। উঃ! পিঠটা ভয়ানক চুলকাচ্ছে। রঞ্জন আলতো করে কলমটা ধরে যেই সরাতে যাবে, ওমনি ম্যাডাম বলে ওঠেন, "মিঃ পাকরাশী.....!"
"অ্যাঁ...."তোতলায় রঞ্জন।
"নিন, এখানটায় সই করুন।"
বলে গার্জিয়ান অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারটা এগিয়ে দিয়ে দিদিমণি পরের ছাত্রের নাম ধরে ডাকেন।
ম্যাডামের কলম দিয়েই সই করে অন্যমনস্ক ভাণ করে সেটা পকেটে ঢোকায় রঞ্জন। আঃ!সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিকের মতো চুলকানিটা কমে যায়।
"গুড ডে, ম্যাডাম... " বলে রঞ্জন ছেলের হাত ধরে টেনে উঠে দরজা দিয়ে বেরোতে যাবে, এমন সময়, আবার,"মিঃ পাকরাশী" ম্যাডাম ডাকেন।
"ইয়েস ম্যাডাম!..... " হাল ছেড়ে দিয়ে বলে রঞ্জন । ধরা পড়ে গেল বোধহয়। এসব ক্ষেত্রে কি বলবে ওর মকশো করাই থাকে। সরি ম্যডাম, আপনার কলমটা ভুল করে নিয়ে চলে এসেছি, বলে শুরু করতে হবে। শেষ করতে হবে, কিছু মনে করবেন না ম্যাডাম, এই বলে।
কলমটা ফেরত দেবে বলে যেই পকেটে হাত দিয়েছে ওমনি চুলকানিটা ফের শুরু হয়ে গেল। উফ্! কি জ্বালা!
"মিঃ পাকরাশী, একটা কথা আপনাকে আমার জানানো উচিৎ। আপনার ছেলে কিন্তু খুব ভালো দাবা খেলে। এবারে ইন্টার স্কুল চেস টুর্নামেন্টে ও আমাদের জুনিয়র লেভেল টিমে থাকতে পারে" ম্যাডাম বললেন।
যাক বাবা! ধরতে পারেনি। মুখে বিগলিত একটা ভাব এনে 'থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম' বলে রঞ্জন ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
স্কুলের বাইরে এসে বাইকে উঠতে যাবে, এমন সময় দেখে, ছেলের পকেট থেকে একটা সুদৃশ্য চাবির রিং বের করে ব্যাগে ঢোকাচ্ছে। তাতে দু তিনটে ছোট ছোট চাবি রয়েছে।
"কিসের চাবি রে ওগুলো?" বাইকে স্টার্ট দিতে দিতে বলে রঞ্জন।
"জানি না বাবা" ছেলে নির্বিকার ভাবে উত্তর দেয়।
"মানে? জানিস না তো তোর হাতে এল কি করে?"
"ম্যাডামের টেবিল থেকে নিয়েছি।"
"কেন-ও-ও? "প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে রঞ্জন।
"কি করব? পিঠটা খুব চুলকোচ্ছিল তো!"
.
.চমকে ওঠায় বাইকের স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায় রঞ্জনের ........
ভাবতে থাকে সৌরভ গাঙ্গুলীর হার্টের রোগ হেরিডিটারি, তাহলে কি এই চুলকানি রোগটাও
হেরিডিটারি, বাবাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে তো.....
No comments:
Post a Comment